ব্লকচেইন (Blockchain) শব্দটা শুনলেই কি আপনার মাথা ঘুরে যায়? মনে হয় এটি খুব জটিল কোনো প্রযুক্তি? চিন্তা নেই। আজ আমরা কোনো জটিল সংজ্ঞা নয়, বরং একটি সহজ গল্পের মাধ্যমে জানবো ব্লকচেইন আসলে কী।
🧱 গল্পের নাম: “সত্যের খাতা – ব্লকচেইন”
একসময় এক ছোট্ট গ্রাম ছিল — নাম ডেটাভিল।
এই গ্রামে সবাই একে অপরের সাথে জিনিসপত্র কেনাবেচা করত। কিন্তু একটা সমস্যা ছিল — কে কার কাছে কত টাকা দিল, কে কাকে কী দিল, সেটা লেখার জন্য সবাই একটা খাতা ব্যবহার করত।
খাতাটা রাখত গ্রামের একজন বুড়ো মানুষ — নাম তার হাসান কাকা।
তিনি ছিলেন গ্রামের “বিশ্বাসযোগ্য” ব্যক্তি। সবাই বলত, “হাসান কাকা খাতায় যা লেখেন, সেটাই শেষ কথা!”
কিন্তু একদিন হঠাৎ খাতাটা পুড়ে গেল 🔥
সব হিসাব মুছে গেল! এখন কেউ জানে না কে কার কাছে ঋণী, কে কাকে টাকা দেবে! সবাই ঝগড়া শুরু করে দিল 😠
📜 তারপর গ্রামের এক ছেলে নতুন আইডিয়া দিল ছেলেটার নাম রাহিম। সে বলল – “আমরা যদি একসাথে অনেকগুলো খাতা রাখি? সবাই মিলে লেনদেন লিখে রাখি? তাহলে কেউ একা খাতা বদলাতে পারবে না!”
সবাই মিলে ঠিক করল, এখন থেকে:
গ্রামের প্রত্যেকজনের কাছে খাতার একটা কপি থাকবে।
কেউ যখন কোনো লেনদেন করবে, সবাই সেটা দেখে নিজ নিজ খাতায় লিখে রাখবে।
নতুন লেনদেন যোগ হওয়ার আগে সবাই মিলে যাচাই করবে, আগের লেখাগুলো ঠিক আছে কি না।
এইভাবে, গ্রামের প্রত্যেকে একসাথে “সত্যের খাতা” ধরে রাখল। এই খাতার নামই হলো ব্লকচেইন।
🔗 এখন দেখি নামটার মানে কী ব্লক (Block): প্রতিবার নতুন কিছু লেনদেন (ডেটা) যোগ হলে সেটাকে বলে একটা ব্লক।
চেইন (Chain): প্রতিটি ব্লক আগের ব্লকের সাথে জুড়ে যায় — ঠিক যেমন চেইনের রিং একটার সাথে আরেকটা যুক্ত থাকে।
👉 তাই নাম হলো “ব্লকচেইন”।
💡 ব্লকচেইনের মূল বৈশিষ্ট্য গল্পের এই "সত্যের খাতা" সিস্টেমটির কিছু দারুণ সুবিধা আছে, যা একে বিশেষ করে তুলেছে:
কেউ একা বদলাতে পারে না: খাতা পরিবর্তন করতে হলে গ্রামের সবার কপি বদলাতে হবে, যা অসম্ভব।
স্বচ্ছতা (Transparency): যেহেতু খাতার কপি সবার কাছে, তাই সবাই সব লেনদেন দেখতে পারে।
নিরাপদ (Secure): তথ্য পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব, কারণ সবাই মিলে সিস্টেমটাকে পাহারা দেয়।
কেন্দ্রীয় কেউ নেই: এখানে কোনো হাসান কাকা বা ব্যাংক নেই। সবাই একসাথে সিস্টেমটি নিয়ন্ত্রণ করে।
🌐 আজকের দুনিয়ায় ব্লকচেইন কীভাবে কাজ করে আজ আমরা ডেটাভিল গ্রাম থেকে বের হয়ে গেছি, কিন্তু সেই একই ধারণা এখন চলে এসেছে আমাদের ডিজিটাল দুনিয়ায়।
এখন:
ব্লকচেইনে ক্রিপ্টোকারেন্সি (যেমন Bitcoin, Ethereum) চলে।
স্মার্ট কনট্রাক্ট (স্বয়ংক্রিয় চুক্তি), NFT (ডিজিটাল আর্ট), ভোটিং সিস্টেম, এমনকি সরকারি রেকর্ড পর্যন্ত এতে রাখা যায়।
🏁 সংক্ষেপে ব্লকচেইন মানে হলো একগুচ্ছ মানুষ (বা কম্পিউটার) মিলে সত্যের একটি অপরিবর্তনযোগ্য কপি ধরে রাখছে, যাতে কেউ একা সেখানে মিথ্যা লিখতে বা তথ্য পরিবর্তন করতে না পারে।